০৪:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এশিয়া-প্যাসিফিক ফোরাম

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত বিশ্বকে বাড়তি অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তরে এগিয়ে আসতে হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
  • আপডেট সময় : ০৩:২৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫ ৩২ বার পড়া হয়েছে

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় রূপান্তরমূলক পরিবর্তন আনতে উন্নত বিশ্বকে বাড়তি অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু অভিযোজন নিশ্চিত করতে খণ্ডকালীন ও সীমিত প্রকল্প থেকে সরে এসে কৃষি, পানি, জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় ব্যবস্থাপনাসহ সব খাতে সমন্বিত ও পদ্ধতিগত পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। এ জন্য জলবায়ুবান্ধব প্রযুক্তি, প্রকৃতিনির্ভর সমাধান এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো অত্যাবশ্যক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে—চরম ঝুঁকির মধ্যেও অভিযোজন সম্ভব।

বুধবার ব্যাংককে অনুষ্ঠিত “রেজিলিয়েন্স ফর অল: ক্যাটালইজিং ট্রান্সফরমেশনাল অ্যাডাপ্টেশন” শীর্ষক ৯ম এশিয়া-প্যাসিফিক ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপ্টেশন ফোরামের মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

রিজওয়ানা হাসান উল্লেখ করেন, সাহসী ও উদ্ভাবনী পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে শুধু জীবন রক্ষা করেনি, বরং ভূমি, পানি, জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় ব্যবস্থাপনাও সুরক্ষিত করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা, যেখানে আটটি ক্ষেত্রে ১১৩টি কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং যার আনুমানিক ব্যয় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এসবই বাংলাদেশের অভিযোজন সক্ষমতার মাইলফলক। এছাড়া, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড বিশ্বের প্রথম দেশীয় অভিযোজন তহবিল হিসেবে জলবায়ু প্রকল্পে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

দুর্যোগ প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির আওতায় ৭৮ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক, যার অর্ধেক নারী, কাজ করছে। স্থাপন করা হয়েছে ৪ হাজার ২৯১টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও ৫২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ উদ্ধার নৌযান এবং উপকূলীয় অঞ্চলে কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ খরা, লবণাক্ততা ও জলমগ্ন সহনশীল ধান প্রজাতি উদ্ভাবন করেছে এবং ভাসমান কৃষি জনপ্রিয় করেছে। বরেন্দ্র অঞ্চল ও হাওরাঞ্চলে প্রকৃতিনির্ভর অভিযোজন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং টাঙ্গুয়ার হাওর এর সহ-ব্যবস্থাপনা জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্থিতিশীলতা বাড়িয়েছে। উপকূলীয় বাঁধ ও মিঠাপানির ব্যবস্থাপনা লবণাক্ততা মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের অভিযোজন সাফল্যের মূল চালিকা শক্তি হলো শক্তিশালী নীতি ও শাসনব্যবস্থা, জনগণভিত্তিক নেতৃত্ব এবং উদ্ভাবনী অর্থায়ন।

সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ এ ক্ষেত্রে আইনগত ভিত্তি দিয়েছে, আর তৃণমূল পর্যায়ের উদ্ভাবন ও স্বেচ্ছাসেবক নেটওয়ার্ক মানুষকেন্দ্রিক অভিযোজনের উদাহরণ স্থাপন করেছে। পাশাপাশি ক্লাইমেট ফিসকাল ফ্রেমওয়ার্ক ও জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডসহ জিইএফ, জিসিএফ, এলডিসিএফ ও অ্যাডাপ্টেশন ফান্ডের মতো আন্তর্জাতিক উৎস অভিযোজন কার্যক্রম সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

মন্ত্রিপর্যায়ের এ গোলটেবিল বৈঠকে জাপানের গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক উপমন্ত্রী ডোই কেনতারো, ব্রিটিশ হাইকমিশন দিল্লির ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিওনাল ডিপার্টমেন্টের প্রধান জন ওয়ারবার্টন, ইউএনইপি এশিয়া-প্যাসিফিক অফিসের আঞ্চলিক পরিচালক দেচেন সেরিং, ফিলিপাইনের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগের সহকারী সচিব নোরালেন উয় এবং এডিবি থাইল্যান্ড রেসিডেন্ট মিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর আনুজ মেহতা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

এশিয়া-প্যাসিফিক ফোরাম

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত বিশ্বকে বাড়তি অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তরে এগিয়ে আসতে হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা

আপডেট সময় : ০৩:২৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় রূপান্তরমূলক পরিবর্তন আনতে উন্নত বিশ্বকে বাড়তি অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু অভিযোজন নিশ্চিত করতে খণ্ডকালীন ও সীমিত প্রকল্প থেকে সরে এসে কৃষি, পানি, জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় ব্যবস্থাপনাসহ সব খাতে সমন্বিত ও পদ্ধতিগত পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। এ জন্য জলবায়ুবান্ধব প্রযুক্তি, প্রকৃতিনির্ভর সমাধান এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো অত্যাবশ্যক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে—চরম ঝুঁকির মধ্যেও অভিযোজন সম্ভব।

বুধবার ব্যাংককে অনুষ্ঠিত “রেজিলিয়েন্স ফর অল: ক্যাটালইজিং ট্রান্সফরমেশনাল অ্যাডাপ্টেশন” শীর্ষক ৯ম এশিয়া-প্যাসিফিক ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপ্টেশন ফোরামের মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

রিজওয়ানা হাসান উল্লেখ করেন, সাহসী ও উদ্ভাবনী পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে শুধু জীবন রক্ষা করেনি, বরং ভূমি, পানি, জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় ব্যবস্থাপনাও সুরক্ষিত করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা, যেখানে আটটি ক্ষেত্রে ১১৩টি কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং যার আনুমানিক ব্যয় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এসবই বাংলাদেশের অভিযোজন সক্ষমতার মাইলফলক। এছাড়া, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড বিশ্বের প্রথম দেশীয় অভিযোজন তহবিল হিসেবে জলবায়ু প্রকল্পে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

দুর্যোগ প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির আওতায় ৭৮ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক, যার অর্ধেক নারী, কাজ করছে। স্থাপন করা হয়েছে ৪ হাজার ২৯১টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও ৫২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ উদ্ধার নৌযান এবং উপকূলীয় অঞ্চলে কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ খরা, লবণাক্ততা ও জলমগ্ন সহনশীল ধান প্রজাতি উদ্ভাবন করেছে এবং ভাসমান কৃষি জনপ্রিয় করেছে। বরেন্দ্র অঞ্চল ও হাওরাঞ্চলে প্রকৃতিনির্ভর অভিযোজন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং টাঙ্গুয়ার হাওর এর সহ-ব্যবস্থাপনা জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্থিতিশীলতা বাড়িয়েছে। উপকূলীয় বাঁধ ও মিঠাপানির ব্যবস্থাপনা লবণাক্ততা মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের অভিযোজন সাফল্যের মূল চালিকা শক্তি হলো শক্তিশালী নীতি ও শাসনব্যবস্থা, জনগণভিত্তিক নেতৃত্ব এবং উদ্ভাবনী অর্থায়ন।

সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ এ ক্ষেত্রে আইনগত ভিত্তি দিয়েছে, আর তৃণমূল পর্যায়ের উদ্ভাবন ও স্বেচ্ছাসেবক নেটওয়ার্ক মানুষকেন্দ্রিক অভিযোজনের উদাহরণ স্থাপন করেছে। পাশাপাশি ক্লাইমেট ফিসকাল ফ্রেমওয়ার্ক ও জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডসহ জিইএফ, জিসিএফ, এলডিসিএফ ও অ্যাডাপ্টেশন ফান্ডের মতো আন্তর্জাতিক উৎস অভিযোজন কার্যক্রম সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

মন্ত্রিপর্যায়ের এ গোলটেবিল বৈঠকে জাপানের গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক উপমন্ত্রী ডোই কেনতারো, ব্রিটিশ হাইকমিশন দিল্লির ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিওনাল ডিপার্টমেন্টের প্রধান জন ওয়ারবার্টন, ইউএনইপি এশিয়া-প্যাসিফিক অফিসের আঞ্চলিক পরিচালক দেচেন সেরিং, ফিলিপাইনের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগের সহকারী সচিব নোরালেন উয় এবং এডিবি থাইল্যান্ড রেসিডেন্ট মিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর আনুজ মেহতা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।