০৭:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রতিযোগিতামূলক চাকরির জন্য স্নাতকরা কি প্রস্তুত

এ কে এম মাহফুজুর রহমান
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৭:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৩৩ বার পড়া হয়েছে

বর্তমানের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি কিংবা একাডেমিক অর্জন উচ্চ-বেতনের চাকরি বা আন্তর্জাতিক মানের ক্যারিয়ারের নিশ্চয়তা দেয় না। আধুনিক অর্থনীতি ও প্রযুক্তিনির্ভর কর্মবাজার চায় ব্যবহারিক দক্ষতা, ডিজিটাল এবং ভাষাগত সক্ষমতা, অভিযোজনশীলতা এবং পেশাদার মনোভাব। বাংলাদেশে তরুণদের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফল আনার জন্য শিক্ষাদান, প্রশিক্ষণ এবং রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার সমন্বয় অপরিহার্য।

বর্তমান বাস্তবতায়, ২০২৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর কোয়ার্টারে বাংলাদেশে সার্বিক বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা এর আগের বছরের ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ থেকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে এ হার আরো উদ্বেগজনক, ২০২৩ সালে ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ, যেখানে ২০২২ সালে ছিল ১২ শতাংশ। বিগত পাঁচ বছরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৪ থেকে ৮ লাখে পৌঁছেছে। ২০২২ সালে উচ্চশিক্ষিত যুবকদের বেকারত্ব ছিল ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০১৩ সালে ছিল মাত্র ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। একই সময়ে ২৬ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন যুব জনগোষ্ঠীর ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বা প্রায় ১ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন কর্মরত নয়, শিক্ষার্থী নয়, কোনো প্রশিক্ষণের মধ্যেও নেই তারা। এদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গামী, ২১ দশমিক ৩ শতাংশ মাধ্যমিক ও ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষিত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ বেকার থেকে যায়; মাত্র ৪২ দশমিক ২৯ শতাংশ বেতনভুক্ত কাজে যুক্ত হন এবং ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ স্বনির্ভরভাবে কাজ করেন। এর বাইরে বাকিরা কোনো অর্থবহ কর্মসংস্থানে যুক্ত নন।

বিজ্ঞাপন

এই চিত্র দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক ভারসাম্যের জন্য উদ্বেগজনক। উচ্চশিক্ষিত বেকারত্বের বৃদ্ধি, দক্ষতা ও বাজার চাহিদার অমিল এবং পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে অনেক তরুণ বিদেশে কর্মসংস্থানের চেষ্টা করছেন, যা দেশের মানবসম্পদে ক্ষয় সৃষ্টি করছে। এই সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন নৈতিক ও কার্যকর নীতি, প্রশিক্ষণনির্ভর শিক্ষাবান্ধব অবকাঠামো এবং চাহিদাভিত্তিক কারিকুলাম। এসটিইএম শিক্ষা সম্প্রসারণ, দক্ষতাধর্মী শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, শিল্প-শিক্ষা সংযোগ এবং কাঠামোবদ্ধ ইন্টার্নশিপ ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ও বাজার চাহিদার সামঞ্জস্য আনতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেইপ) ও অনুরূপ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্প্রসারণ জরুরি। যদিও ২০১৪ থেকে সেইপের আওতায় প্রায় ৮০ লাখ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, ৯১ শতাংশ সনদপ্রাপ্ত এবং ৭০ শতাংশ কর্মসংস্থানে যুক্ত হয়েছেন, যা এখনো পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া সক্রিয় শ্রমবাজার নীতি (এএলএমপি) বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও চাকরি সংযোগ জোরদার করতে হবে। জাতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নির্ধারিত ১১ দশমিক ৬ মিলিয়ন কর্মসংস্থান লক্ষ্যের (৮ দশমিক ১৭ মিলিয়ন দেশীয় ও ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন বিদেশে) বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন। বাংলাদেশে প্রায় ৮৫ শতাংশ কর্মসংস্থান অনানুষ্ঠানিক খাতে, যা দুর্বল সুরক্ষা ও নিম্ন বেতনের কারণ। সহজ ব্যবসাপঞ্জীকরণ, সামাজিক সুরক্ষা এবং শ্রম আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের মান উন্নত করা সম্ভব।

সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১৬ লাখ ৩০ হাজার কমেছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন হার। সাম্প্রতিক তথ্য উদ্বেগজনক, ইউএন উইমেনের (মে ২০২৫) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রায় ২১ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১৮ লাখই নারী (মোটের ৮৫ শতাংশ)। বর্তমানে মাত্র ১৯ শতাংশ নারী শ্রমবাজারে সক্রিয়, যা কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, লেবানন ও জর্ডানে প্রেরিত নারীশ্রমিকের সংখ্যা ২০২৪ সালের তুলনায় অর্ধেক বা তারও কম। বিদেশি শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের পাশাপাশি তৈরি পোশাক খাতেও নারীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে একসময় শ্রমিকদের ৮০ শতাংশের বেশি ছিলেন নারী। বিবিএস শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ ১০ হাজার, যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়ায় ২ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজারে; একই সময় শ্রমশক্তির বাইরে থাকা নারীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজারে। অর্থাৎ এক বছরে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ ৩০ হাজার কমেছে।

বিদেশি চাকরি নিঃসন্দেহে উচ্চবেতন, সুযোগ ও উন্নত জীবনযাপনের প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু স্থানীয় ক্ষেত্রেও সমপর্যায়ের সুযোগ তৈরি সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তি, আউটসোর্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, টেক্সটাইল ও পোশাক উদ্ভাবন, গবেষণা ও উন্নয়ন, টেকসই উৎপাদন, ফার্মাসিউটিক্যালস, বায়োটেক এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির (সৌর, বায়ু, বায়োমাস) মতো খাতগুলোয় প্রশিক্ষিত স্নাতকরা সম্মানজনক আয় করতে পারেন।

বাংলাদেশের যুবশক্তি সম্ভাবনাময়, তবে যোগ্যতা-সুযোগের ফাঁক, সুশাসনের দুর্বলতা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে শিল্প, সরকার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ডিগ্রি হবে ভিত্তি, কিন্তু লক্ষ্য হবে যোগ্য, অভিযোজনশীল ও বিশ্বমানের পেশাজীবী তৈরি করা, যারা দেশেও সম্মানজনক আয় করবেন এবং আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারেও প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবেন। ভবিষ্যৎ তাদেরই, যারা আজ থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।

লেখক : ডেপুটি ডিরেক্টর, ফ্যাকাল্টি এইচআর, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, ঢাকা ইউনিভার্সিটি জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

প্রতিযোগিতামূলক চাকরির জন্য স্নাতকরা কি প্রস্তুত

আপডেট সময় : ০৪:৪৭:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বর্তমানের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি কিংবা একাডেমিক অর্জন উচ্চ-বেতনের চাকরি বা আন্তর্জাতিক মানের ক্যারিয়ারের নিশ্চয়তা দেয় না। আধুনিক অর্থনীতি ও প্রযুক্তিনির্ভর কর্মবাজার চায় ব্যবহারিক দক্ষতা, ডিজিটাল এবং ভাষাগত সক্ষমতা, অভিযোজনশীলতা এবং পেশাদার মনোভাব। বাংলাদেশে তরুণদের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফল আনার জন্য শিক্ষাদান, প্রশিক্ষণ এবং রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার সমন্বয় অপরিহার্য।

বর্তমান বাস্তবতায়, ২০২৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর কোয়ার্টারে বাংলাদেশে সার্বিক বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা এর আগের বছরের ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ থেকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে এ হার আরো উদ্বেগজনক, ২০২৩ সালে ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ, যেখানে ২০২২ সালে ছিল ১২ শতাংশ। বিগত পাঁচ বছরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৪ থেকে ৮ লাখে পৌঁছেছে। ২০২২ সালে উচ্চশিক্ষিত যুবকদের বেকারত্ব ছিল ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০১৩ সালে ছিল মাত্র ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। একই সময়ে ২৬ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন যুব জনগোষ্ঠীর ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বা প্রায় ১ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন কর্মরত নয়, শিক্ষার্থী নয়, কোনো প্রশিক্ষণের মধ্যেও নেই তারা। এদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গামী, ২১ দশমিক ৩ শতাংশ মাধ্যমিক ও ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষিত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ বেকার থেকে যায়; মাত্র ৪২ দশমিক ২৯ শতাংশ বেতনভুক্ত কাজে যুক্ত হন এবং ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ স্বনির্ভরভাবে কাজ করেন। এর বাইরে বাকিরা কোনো অর্থবহ কর্মসংস্থানে যুক্ত নন।

বিজ্ঞাপন

এই চিত্র দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক ভারসাম্যের জন্য উদ্বেগজনক। উচ্চশিক্ষিত বেকারত্বের বৃদ্ধি, দক্ষতা ও বাজার চাহিদার অমিল এবং পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে অনেক তরুণ বিদেশে কর্মসংস্থানের চেষ্টা করছেন, যা দেশের মানবসম্পদে ক্ষয় সৃষ্টি করছে। এই সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন নৈতিক ও কার্যকর নীতি, প্রশিক্ষণনির্ভর শিক্ষাবান্ধব অবকাঠামো এবং চাহিদাভিত্তিক কারিকুলাম। এসটিইএম শিক্ষা সম্প্রসারণ, দক্ষতাধর্মী শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, শিল্প-শিক্ষা সংযোগ এবং কাঠামোবদ্ধ ইন্টার্নশিপ ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ও বাজার চাহিদার সামঞ্জস্য আনতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেইপ) ও অনুরূপ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্প্রসারণ জরুরি। যদিও ২০১৪ থেকে সেইপের আওতায় প্রায় ৮০ লাখ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, ৯১ শতাংশ সনদপ্রাপ্ত এবং ৭০ শতাংশ কর্মসংস্থানে যুক্ত হয়েছেন, যা এখনো পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া সক্রিয় শ্রমবাজার নীতি (এএলএমপি) বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও চাকরি সংযোগ জোরদার করতে হবে। জাতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নির্ধারিত ১১ দশমিক ৬ মিলিয়ন কর্মসংস্থান লক্ষ্যের (৮ দশমিক ১৭ মিলিয়ন দেশীয় ও ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন বিদেশে) বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন। বাংলাদেশে প্রায় ৮৫ শতাংশ কর্মসংস্থান অনানুষ্ঠানিক খাতে, যা দুর্বল সুরক্ষা ও নিম্ন বেতনের কারণ। সহজ ব্যবসাপঞ্জীকরণ, সামাজিক সুরক্ষা এবং শ্রম আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের মান উন্নত করা সম্ভব।

সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১৬ লাখ ৩০ হাজার কমেছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন হার। সাম্প্রতিক তথ্য উদ্বেগজনক, ইউএন উইমেনের (মে ২০২৫) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রায় ২১ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১৮ লাখই নারী (মোটের ৮৫ শতাংশ)। বর্তমানে মাত্র ১৯ শতাংশ নারী শ্রমবাজারে সক্রিয়, যা কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, লেবানন ও জর্ডানে প্রেরিত নারীশ্রমিকের সংখ্যা ২০২৪ সালের তুলনায় অর্ধেক বা তারও কম। বিদেশি শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের পাশাপাশি তৈরি পোশাক খাতেও নারীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে একসময় শ্রমিকদের ৮০ শতাংশের বেশি ছিলেন নারী। বিবিএস শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ ১০ হাজার, যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়ায় ২ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজারে; একই সময় শ্রমশক্তির বাইরে থাকা নারীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজারে। অর্থাৎ এক বছরে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ ৩০ হাজার কমেছে।

বিদেশি চাকরি নিঃসন্দেহে উচ্চবেতন, সুযোগ ও উন্নত জীবনযাপনের প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু স্থানীয় ক্ষেত্রেও সমপর্যায়ের সুযোগ তৈরি সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তি, আউটসোর্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, টেক্সটাইল ও পোশাক উদ্ভাবন, গবেষণা ও উন্নয়ন, টেকসই উৎপাদন, ফার্মাসিউটিক্যালস, বায়োটেক এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির (সৌর, বায়ু, বায়োমাস) মতো খাতগুলোয় প্রশিক্ষিত স্নাতকরা সম্মানজনক আয় করতে পারেন।

বাংলাদেশের যুবশক্তি সম্ভাবনাময়, তবে যোগ্যতা-সুযোগের ফাঁক, সুশাসনের দুর্বলতা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে শিল্প, সরকার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ডিগ্রি হবে ভিত্তি, কিন্তু লক্ষ্য হবে যোগ্য, অভিযোজনশীল ও বিশ্বমানের পেশাজীবী তৈরি করা, যারা দেশেও সম্মানজনক আয় করবেন এবং আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারেও প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবেন। ভবিষ্যৎ তাদেরই, যারা আজ থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।

লেখক : ডেপুটি ডিরেক্টর, ফ্যাকাল্টি এইচআর, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, ঢাকা ইউনিভার্সিটি জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন