০২:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রেলওয়ে আমিন থেকে ফিল্ড কানুনগো পদে পদোন্নতি জালিয়াতি

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
  • আপডেট সময় : ০৫:০৩:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫ ৪৩২ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চলে ভূ-সম্পত্তি বিভাগে আমিন থেকে ফিল্ড কানুনগো পদে জালিয়াতির মাধ্যমে তিনজনকে পদোন্নতি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া ৫ বছরের বাৎসরিক গোপনীয় (এসিআর) প্রতিবেদনে প্রতিসাক্ষর জালিয়াতি করে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে লালমনিরহাট ডিইও দপ্তরের আমিন মঞ্জুরুল হক। তিনি দাবি করেন বিধি লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত দুজন ফিল্ড কানুনগো পদোন্নতি দেওয়ায় রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হচ্ছে। কারণ পদুমতি হলে ওই কর্মকর্তার বেতন ভাতাদিসহ সার্বিক দিক থেকে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। পাকশী এবং লালমনিহাট ভূ-সম্পত্তি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও একই অভিযোগ তুলেছেন।

রেলওয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে সরকারকে প্রতিমাসে অতিরিক্ত টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা অভিযোগ তুলেছে অবৈধ পদোন্নতি দিয়ে নিজেরা লাভবান হয়ে রাষ্ট্রের প্রতি মাসে অতিরিক্ত টাকা ক্ষতি সাধন করছে। যা বিধির পরিপন্থী। নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায় ২০২৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পদোন্নতি দেওয়ার জন্য ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির আহবায়ক ছিলেন-মোহাম্মদ রেজাউল করিম সাবেক চীফ এস্টেট অফিসার(পশ্চিমাঞ্চল),কমিটির সদস্য সচিব হলেন- মোছাম্মদ আফরিন নাহার, জুনিয়র পার্সোনেল অফিসার-২/পশ্চিম এবং অপর আরেক সদস্য হলেন- উম্মে কুলসুম শম্পা, সাবেক ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা রাজশাহী সদর।

অভিযোগ পাওয়া গেছে পশ্চিমাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক(জিএম) মামুনুল ইসলাম দায়িত্বে থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিধি লঙ্ঘন করে তিনজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এমনটা দাবি ভূ-সম্পত্তি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের। ওই সময় পাকশীর ভু-সম্পত্তি কর্মকর্তা ছিলেন নুরুজ্জামান।

রাজশাহীর প্রধান ভু-সম্পত্তি কর্মকর্তা (সিইও) পদোন্নতি পাওয়া কারও এসিআরএ রেজাউল করিম প্রতিস্বাক্ষর না করলেও তার পক্ষে জাল সই করেন পাকশির সাবেক ডিইও নুরুজ্জামান। আমিন থেকে ফিল্ড কানুনগো পদে পদোন্নতি দেয়ার জন্য যাচাই-বাছাই শেষে পাঁচ জনের তালিকা তৈরি করে কমিটি।

জ্যেষ্ঠতার তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- মোস্তাফিজুর রহমান,পিতা, কাউসার আলী,আমিন পদে কর্মরত ছিলেন ডিইও লালমনিরহাট দফতর, হীরেন্দ্রনাথ সরকার, পিতা মৃত বিশ্বনাথ সরকার, আমিন পদে কর্মরত ছিলেন ডিইও পাকশি দপ্তর, শেখ মঞ্জুরুল হক, পিতা মৃত নুর আহমেদ, তিনি আমীন পদে দায়িত্ব পালন করছেন ডিইও লালমনিরহাট দপ্তর,শরিফুল ইসলাম, পিতা মো. আব্দুস সবুর, আমিন পদে কর্মরত ছিলেন ঈশ্বরদী,পাকশি ডিইও দপ্তর, আলিমুর রাজিব পিতা মো. রবিউল করিম আমিন পদে কর্মরত ছিলেন পোড়াদহ কাচারী, ডিইও পাকশী দপ্তর। পাঁচজনের তালিকা করা হলেও সুপরিকল্পিতভাবে তিনজনকে আমিন থেকে ফিল্ড কানুনগো পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে যারা পদোন্নতি পেয়েছে তারা হলেন-হীরেন্দ্রনাথ সরকার, শরিফুল ইসলাম এবং আলিমুর রাজিব।

তাদের পদোন্নতির জন্য অর্থের যোগানদাতা ছিলেন রাজশাহী ভূ সম্পত্তি সদরের ভারপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান সহকারী তাপসী সুলতানা পদোন্নতি পাওয়া রাজীবের বোন। তার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় তাকে রাজশাহী ভূমি সদর দপ্তর থেকে পাকশী ভূ- সম্পত্তি ডিইও দপ্তরে বদলি করা হয়।

নিয়োগ বিধি ২০২০: বাংলাদেশ রেলওয়ে নিয়োগ বিধিতে বলা হয়েছে আমিন হতে ফিল্ড কানুনগো পদে ৮০পার্সেন্ট সরাসরি নিয়োগ দিবে রেল কর্তৃপক্ষ আর যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি পাবে ২০ পার্সেন্ট। রেলওয়ে পূর্ব এবং পশ্চিমাঞ্চল দুই বিভাগে চারটি এস্টেট(ভূমি)অফিস রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলে দুটি আর পূর্বাঞ্চলে দুটি। রাজশাহী বিভাগে দুটির মধ্যে একটি পাকশী এস্টেট অফিস অপরটি লালমনিরহাট ভূ-সম্পত্তি (ডিইও)দপ্তর। চট্টগ্রাম বিভাগে ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ডিইও দপ্তর রয়েছে দুটি। একটি ঢাকা কমলাপুর ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার দপ্তর এবং অপরটি চট্টগ্রাম রেলওয়ে ভূমি অফিস। এই চারটি ডিভিশনে মোট ফিল্ড কানুনগো পদ রয়েছে ২১টি। এই পদের বিপরীতে ২০ পার্সেন্ট হিসেবে পদোন্নতি পায় ৪ জন।

২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দুই দফায় মোট ৬ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। রেলওয়ে বিধি
২০২০ লঙ্ঘন করে ২০২৪ সালে অতিরিক্ত দুইজন ব্যক্তিকে আমিন থেকে ফিল্ড কানুনগো পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৬ সালে পূর্ব-পশ্চিম দুই অঞ্চল মিলে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে তিনজনকে আমিন থেকে ফিল্ড কানুনগো পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। যারা পদোন্নতি পেয়েছে তারা হলেন-মোহাম্মদ মহসিন আলী, মোহাম্মদ ফোরকান, মো. শহীদুজ্জামান। বিধি অনুযায়ী ২০ পার্সেন্ট হিসেবে প্রথম দফায় তিন জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়। পদোন্নতির অপেক্ষায় বাকি থাকে ১ জন। ২০২৪ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে পশ্চিম অঞ্চলের সাবেক জিএম মামুনুল ইসলাম, পাকশীর সাবেক ডিইও নুরুজ্জামান এবং কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরস্পর যোগশাজসে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে লালমনিহাট ডিইও দপ্তরের আমিন মঞ্জুরুল হক। পদোন্নতিতে জালিয়াতি করা হয়েছে বলে ২০২৪ সালে ৪ মার্চ রাজশাহীর সাবেক জিএম মামুনুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। তার করা অভিযোগ আজও আলোর মুখ দেখেনি। রাজশাহী সদরের সাবেক প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা(সিইও) রেজাউল করিম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পদোন্নতি পাওয়া কোন কর্মকর্তার এসিআরএ তিনি প্রতিস্বাক্ষর করেননি। যার অডিও রেকর্ড সংরক্ষণ রয়েছে। জালিয়াতি পদোন্নতির বিষয়ে তাপসী সুলতানা জানান ২০% হিসেবে পদোন্নতি পায় ৪ জন।
তিনি দাবি করেন, কর্তৃপক্ষ চাইলে অবশিষ্ট ০.২ পয়েন্টের বিপরীতে কাজের স্বার্থে আরও একজনকে পদোন্নতি দিতে পারেন। তবে ৬ জনকে কিভাবে দিলেন। তাপসী বলেন,একজন বাতিল হবে। অভিযোগের ট্রাকিং নাম্বার ০১৭১০০০৩৩৩২০০০২ অডিট শাখা রেলপথ মন্ত্রণালয়। অভিযোগ দাখিলের দেড় বছর পার হলেও অন্ধকারেই রয়ে গেছে তদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব হিল্লোল বিশ্বাস। অভিযোগকারী লালমনিহাট ডিভিশনের আমিন মঞ্জুরুল হক ২০২৪ সালের ৪ মার্চ রেল সচিবের বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম হিল্লোল বিশ্বাস যুগ্ম সচিব রেলপথ মন্ত্রণালয়।

গত বুধবার ১৯ নভেম্বর জানান এমন অভিযোগ আমি পাইনি এবং আমাকে কোন চিঠি কর্তৃপক্ষ দেননি। রেল সচিব ফাহিমুল ইসলাম গণমাধ্যমের নাম শুনলে বিব্রতবোধ হয়। কানুনগো পদে জালিয়াতির অভিযোগে রেল সচিবের দপ্তরে জমা দেন ডিইও লালমনিরহাট ভূমি অফিসের আমিন মনজুরুল হক। ২০২০ বিধি মালা অনুযায়ী পদোন্নতি চেয়ে সচিবের কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেন।

এ বিষয়ে রেল সচিব ফাইমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ফাইল আমার কাছে আসছে স্বাক্ষর করে শাখায় প্রেরণ করা হয়েছে। প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয় অভিযোগ আমলে নেয়ার পর দেড় বছর পার হয়েছে। তদন্তের কোন সময়সীমা রয়েছে কিনা তিনি বলেন রয়েছে তবে তারা কি করছে সেটি আমি বলতে পারব না। এক কথায় তিনি তার দায় এড়িয়ে গেছেন।

এই অভিযোগের বিষয় রেলওয়ে মহাপরিচালক ডিজি আফজাল হোসেন বলেন, ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রেলওয়ে আমিন থেকে ফিল্ড কানুনগো পদে পদোন্নতি জালিয়াতি

আপডেট সময় : ০৫:০৩:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চলে ভূ-সম্পত্তি বিভাগে আমিন থেকে ফিল্ড কানুনগো পদে জালিয়াতির মাধ্যমে তিনজনকে পদোন্নতি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া ৫ বছরের বাৎসরিক গোপনীয় (এসিআর) প্রতিবেদনে প্রতিসাক্ষর জালিয়াতি করে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে লালমনিরহাট ডিইও দপ্তরের আমিন মঞ্জুরুল হক। তিনি দাবি করেন বিধি লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত দুজন ফিল্ড কানুনগো পদোন্নতি দেওয়ায় রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হচ্ছে। কারণ পদুমতি হলে ওই কর্মকর্তার বেতন ভাতাদিসহ সার্বিক দিক থেকে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। পাকশী এবং লালমনিহাট ভূ-সম্পত্তি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও একই অভিযোগ তুলেছেন।

রেলওয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে সরকারকে প্রতিমাসে অতিরিক্ত টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা অভিযোগ তুলেছে অবৈধ পদোন্নতি দিয়ে নিজেরা লাভবান হয়ে রাষ্ট্রের প্রতি মাসে অতিরিক্ত টাকা ক্ষতি সাধন করছে। যা বিধির পরিপন্থী। নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায় ২০২৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পদোন্নতি দেওয়ার জন্য ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির আহবায়ক ছিলেন-মোহাম্মদ রেজাউল করিম সাবেক চীফ এস্টেট অফিসার(পশ্চিমাঞ্চল),কমিটির সদস্য সচিব হলেন- মোছাম্মদ আফরিন নাহার, জুনিয়র পার্সোনেল অফিসার-২/পশ্চিম এবং অপর আরেক সদস্য হলেন- উম্মে কুলসুম শম্পা, সাবেক ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা রাজশাহী সদর।

অভিযোগ পাওয়া গেছে পশ্চিমাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক(জিএম) মামুনুল ইসলাম দায়িত্বে থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিধি লঙ্ঘন করে তিনজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এমনটা দাবি ভূ-সম্পত্তি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের। ওই সময় পাকশীর ভু-সম্পত্তি কর্মকর্তা ছিলেন নুরুজ্জামান।

রাজশাহীর প্রধান ভু-সম্পত্তি কর্মকর্তা (সিইও) পদোন্নতি পাওয়া কারও এসিআরএ রেজাউল করিম প্রতিস্বাক্ষর না করলেও তার পক্ষে জাল সই করেন পাকশির সাবেক ডিইও নুরুজ্জামান। আমিন থেকে ফিল্ড কানুনগো পদে পদোন্নতি দেয়ার জন্য যাচাই-বাছাই শেষে পাঁচ জনের তালিকা তৈরি করে কমিটি।

জ্যেষ্ঠতার তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- মোস্তাফিজুর রহমান,পিতা, কাউসার আলী,আমিন পদে কর্মরত ছিলেন ডিইও লালমনিরহাট দফতর, হীরেন্দ্রনাথ সরকার, পিতা মৃত বিশ্বনাথ সরকার, আমিন পদে কর্মরত ছিলেন ডিইও পাকশি দপ্তর, শেখ মঞ্জুরুল হক, পিতা মৃত নুর আহমেদ, তিনি আমীন পদে দায়িত্ব পালন করছেন ডিইও লালমনিরহাট দপ্তর,শরিফুল ইসলাম, পিতা মো. আব্দুস সবুর, আমিন পদে কর্মরত ছিলেন ঈশ্বরদী,পাকশি ডিইও দপ্তর, আলিমুর রাজিব পিতা মো. রবিউল করিম আমিন পদে কর্মরত ছিলেন পোড়াদহ কাচারী, ডিইও পাকশী দপ্তর। পাঁচজনের তালিকা করা হলেও সুপরিকল্পিতভাবে তিনজনকে আমিন থেকে ফিল্ড কানুনগো পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে যারা পদোন্নতি পেয়েছে তারা হলেন-হীরেন্দ্রনাথ সরকার, শরিফুল ইসলাম এবং আলিমুর রাজিব।

তাদের পদোন্নতির জন্য অর্থের যোগানদাতা ছিলেন রাজশাহী ভূ সম্পত্তি সদরের ভারপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান সহকারী তাপসী সুলতানা পদোন্নতি পাওয়া রাজীবের বোন। তার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় তাকে রাজশাহী ভূমি সদর দপ্তর থেকে পাকশী ভূ- সম্পত্তি ডিইও দপ্তরে বদলি করা হয়।

নিয়োগ বিধি ২০২০: বাংলাদেশ রেলওয়ে নিয়োগ বিধিতে বলা হয়েছে আমিন হতে ফিল্ড কানুনগো পদে ৮০পার্সেন্ট সরাসরি নিয়োগ দিবে রেল কর্তৃপক্ষ আর যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি পাবে ২০ পার্সেন্ট। রেলওয়ে পূর্ব এবং পশ্চিমাঞ্চল দুই বিভাগে চারটি এস্টেট(ভূমি)অফিস রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলে দুটি আর পূর্বাঞ্চলে দুটি। রাজশাহী বিভাগে দুটির মধ্যে একটি পাকশী এস্টেট অফিস অপরটি লালমনিরহাট ভূ-সম্পত্তি (ডিইও)দপ্তর। চট্টগ্রাম বিভাগে ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ডিইও দপ্তর রয়েছে দুটি। একটি ঢাকা কমলাপুর ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার দপ্তর এবং অপরটি চট্টগ্রাম রেলওয়ে ভূমি অফিস। এই চারটি ডিভিশনে মোট ফিল্ড কানুনগো পদ রয়েছে ২১টি। এই পদের বিপরীতে ২০ পার্সেন্ট হিসেবে পদোন্নতি পায় ৪ জন।

২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দুই দফায় মোট ৬ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। রেলওয়ে বিধি
২০২০ লঙ্ঘন করে ২০২৪ সালে অতিরিক্ত দুইজন ব্যক্তিকে আমিন থেকে ফিল্ড কানুনগো পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৬ সালে পূর্ব-পশ্চিম দুই অঞ্চল মিলে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে তিনজনকে আমিন থেকে ফিল্ড কানুনগো পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। যারা পদোন্নতি পেয়েছে তারা হলেন-মোহাম্মদ মহসিন আলী, মোহাম্মদ ফোরকান, মো. শহীদুজ্জামান। বিধি অনুযায়ী ২০ পার্সেন্ট হিসেবে প্রথম দফায় তিন জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়। পদোন্নতির অপেক্ষায় বাকি থাকে ১ জন। ২০২৪ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে পশ্চিম অঞ্চলের সাবেক জিএম মামুনুল ইসলাম, পাকশীর সাবেক ডিইও নুরুজ্জামান এবং কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরস্পর যোগশাজসে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে লালমনিহাট ডিইও দপ্তরের আমিন মঞ্জুরুল হক। পদোন্নতিতে জালিয়াতি করা হয়েছে বলে ২০২৪ সালে ৪ মার্চ রাজশাহীর সাবেক জিএম মামুনুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। তার করা অভিযোগ আজও আলোর মুখ দেখেনি। রাজশাহী সদরের সাবেক প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা(সিইও) রেজাউল করিম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পদোন্নতি পাওয়া কোন কর্মকর্তার এসিআরএ তিনি প্রতিস্বাক্ষর করেননি। যার অডিও রেকর্ড সংরক্ষণ রয়েছে। জালিয়াতি পদোন্নতির বিষয়ে তাপসী সুলতানা জানান ২০% হিসেবে পদোন্নতি পায় ৪ জন।
তিনি দাবি করেন, কর্তৃপক্ষ চাইলে অবশিষ্ট ০.২ পয়েন্টের বিপরীতে কাজের স্বার্থে আরও একজনকে পদোন্নতি দিতে পারেন। তবে ৬ জনকে কিভাবে দিলেন। তাপসী বলেন,একজন বাতিল হবে। অভিযোগের ট্রাকিং নাম্বার ০১৭১০০০৩৩৩২০০০২ অডিট শাখা রেলপথ মন্ত্রণালয়। অভিযোগ দাখিলের দেড় বছর পার হলেও অন্ধকারেই রয়ে গেছে তদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব হিল্লোল বিশ্বাস। অভিযোগকারী লালমনিহাট ডিভিশনের আমিন মঞ্জুরুল হক ২০২৪ সালের ৪ মার্চ রেল সচিবের বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম হিল্লোল বিশ্বাস যুগ্ম সচিব রেলপথ মন্ত্রণালয়।

গত বুধবার ১৯ নভেম্বর জানান এমন অভিযোগ আমি পাইনি এবং আমাকে কোন চিঠি কর্তৃপক্ষ দেননি। রেল সচিব ফাহিমুল ইসলাম গণমাধ্যমের নাম শুনলে বিব্রতবোধ হয়। কানুনগো পদে জালিয়াতির অভিযোগে রেল সচিবের দপ্তরে জমা দেন ডিইও লালমনিরহাট ভূমি অফিসের আমিন মনজুরুল হক। ২০২০ বিধি মালা অনুযায়ী পদোন্নতি চেয়ে সচিবের কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেন।

এ বিষয়ে রেল সচিব ফাইমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ফাইল আমার কাছে আসছে স্বাক্ষর করে শাখায় প্রেরণ করা হয়েছে। প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয় অভিযোগ আমলে নেয়ার পর দেড় বছর পার হয়েছে। তদন্তের কোন সময়সীমা রয়েছে কিনা তিনি বলেন রয়েছে তবে তারা কি করছে সেটি আমি বলতে পারব না। এক কথায় তিনি তার দায় এড়িয়ে গেছেন।

এই অভিযোগের বিষয় রেলওয়ে মহাপরিচালক ডিজি আফজাল হোসেন বলেন, ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।