সন্তানের কান্না থামাতে হয়: সিইও
- আপডেট সময় : ০৫:১৯:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫ ১৪০ বার পড়া হয়েছে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ শূন্য পদে আসা বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তরে কর্মরত কর্তাব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়ভার নেই বলে মন্তব্য করেছেন রেলপথ সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।
অভিযোগ আছে, অধিন্যাস্ত কর্মচারির চাহিদা পূরণে কান্না থামাতে পিতা-মাতার দায়িত্ব পালন করতে হয় বলে জানান রাজশাহীর রেলওয়ে সদরের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নাদিম সারোয়ার।
পাকশীর ডিইও দপ্তরের সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেন, রাজশাহীর সিইও’র দায়িত্ব অবহেলার কারণে পাকশির সাবেক ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা(ডিইও) আরিফুল ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রের অর্থ আত্মসাতের সুযোগ পেয়েছে। তিনি ফাইল নিয়ে নাদিমের দপ্তরে গেলে কোন কিছুর বিনিময়ে তা হাসিল করে নিয়ে আসেন।
তারা আরও জানান,নাদিম সারোয়ার ঘুষ নেয় না কিন্তু সন্তানের অন্যায় দাবি পূরণে কার্পণ্য করে না। প্রশ্ন তুলে বলেন তিনি তাহলে কি স্বার্থে নথি সই করেন তা বিবেচ্য বিষয়। রাজশাহীর সিইও নিজেই জানান,বাচ্চা কান্নাজড়িত কন্ঠে কোন দাবি করলে তাঁর আবদার পূরণ করতে হয়।
তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, পাকশির সাবেক ডিইও আরিফুল রেলের বৈধ-অবৈধ কাজ নিয়ে আসলে সিইও তার সকল নথি সই করে দেন। তিনি কোন কিছু যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন মনে করেননি। কিন্তু ডিইওর কর্মকাণ্ড জরিপে জানা যায় রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। এমনটা দাবি নাটোর, সান্তাহার, উল্লাপাড়া এবং আব্দুলপুর লিজ গ্রহিতাদের।
পাকশীর ভুমি অফিসের আওতায় রেলের শত শত দোকান, পুকুর, হোটেল এবং বিভিন্ন স্টেশনে বাজারসহ রেলের জমি বিনা টেন্ডারে রফাদফায় সর্বোচ্চ উৎকোচ দাতাকে লিজ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অপকর্মকে সমর্থন করেছে রাজশাহীর সিইও।
গত ৮ অক্টোবর রাজশাহী রেলভবনে গিয়ে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তার দেখা মেলেনি। তিনি আসবেন কি না তা নিশ্চিত করে কেউ বলতেও পারেনি। তিনি তার খেয়াল খুশি মতো অফিস করেন এবং ছুটি কাটায়। সিইওর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার বরাদ দিয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। নাদিম সারোয়ার বেশিরভাগ সময় বাহিরে থাকেন বলে জানান তার দপ্তর। কারণ তাকে তো হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে হয় না। তাদের উপস্থিত-অনউপস্থিত তদারকি করার কেউ নেই। রাজশাহীর সিইও দপ্তরে না থাকলেও সন্তানের কাঁন্না থামাতে প্রয়োজনে বাচ্চার কাছে যান।
তিনি নিজেও বলেছেন,সন্তানের কান্না শুনতে হয়। উনি রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করার কথা মুখে বললেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। রাজশাহীর এস্টেটের চীফ মুখে বলেন,রাষ্ট্রের স্বার্থ সুরক্ষায় কাজ করছি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় তার উল্টো চিত্র। রাষ্ট্রের স্বার্থে সিইওকে গত জুন রেলওয়ের মহাপরিচালক(ডিজি) আফজাল হোসেন মূল লাইসেন্সধারীর জরিমানাসহ খাজনা নেওয়ার নির্দেশ দেন। কয়েক দফা তার সাথে যোগাযোগ করেন করদাতা। সিইও নানা অজুহাত দেখিয়ে সময়ক্ষেপন করেন।
সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট খাজনা পরিশোধের জন্য রাজশাহী যায় করদাতা জাফর। সিইওকে রাজস্ব গ্রহনের আবেদন করা হলে তিনি মায়ের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যায়। যাওয়ার সময় বলে জান দেশে ফিরে খাজনা নেওয়া হবে। আজও তিনি খাজনা গ্রহন করেননি। জরিমানাসহ প্রায় ৯০ হাজার টাকা জাফর সাদেককে রাজস্ব প্রদান করতে হবে।
জাফরের খাজনা না নিয়ে যদি টেন্ডারে লিজ দেওয়া হয় তাহলে রাষ্ট্রীয় কষাগারে জমা হবে ১০/১২ হাজার টাকা। সরকার রাজস্ব হারাবে ৮০ হাজার টাকা। নাদিম সারোয়ার রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করছেন।
রেলভবনের এস্টেট বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করেন,অদক্ষ কর্মকর্তা দিয়ে চলছে রাজশাহী সদর ভুমি অফিস। ডিইও তাহমিদা আক্তার ভুমি আইন সম্পর্কে কিছুই জানে না। এদিকে জরিমানাসহ খাজনা প্রদানে ২০২২ সাল থেকে পাকশি, রাজশাহী এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছে রাজস্ব গ্রহনের আবেদন করেন ১৯৮৪ সালের লাইসেন্স প্রাপ্ত লিজ গ্রহিতা জাফর সাদেক। রেল সচিব ফাহিমুল ইসলামের কাছে গত ৯ মার্চ জরিমানাসহ খাজনা গ্রহনের আবেদন করা হয়। তিনি আবেদন বিবেচনা করেছেন কি-না তা জানা যায়নি।
রেলভবনের এস্টেট বিভাগের উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা রাজশাহীর সিইওকে উদ্দেশ্য করে বলেন,যারা অদক্ষ এবং দায়িত্ব জ্ঞানহীন তাদেরকে জনপ্রশাসন ডাম্পিং হিসেবে পোস্টিং করে।
ডিইওর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তারা জানান,নাইট গার্ড টুকু অফিসের গন্ডির মধ্যে সরকারি জায়গা দখল করে স্বপরিবার এবং স্বজনদের নিয়ে বসবাস করে। রাতে ডিউটি করে দিনে ডিইওর দালালী করে। মামুন ভুমি অফিসে চাকরি না করলেও উৎকোচের অর্থের যোগান দিতে দীর্ঘদিন যাবত পাকশিতে ব্রকারি করে আসছে।
এ বিষয়ে জেডিজি পার্সোনেল তার দপ্তরে কথার এক প্রসঙ্গে বলেন,জনপ্রশাসন থেকে আসা তারা তো রেলের কেউ না। তাদের কোন দায়ভার নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় আবার ক্লোজ করে নেওয়া হয়।
সিইও’র বিষয়ে রাজশাহী রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ফরিদ আহমেদ জানান,নাদিম সারোয়ারের অবহেলা এবং তদারকির অভাবে পাকশির সাবেক ডিইও আরিফুল ইসলাম অপরাধ করার সুযোগ পেয়েছে। এখন জিএমের করণীয় দেখার অপেক্ষায় রেল কর্তৃপক্ষ।










