ডিজি অপসারণের ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ:রেক্টরে সনদ বাণিজ্য

- আপডেট সময় : ০১:০৮:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের(ডিজি)পদ দখল ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এদিকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমিতে প্রশিক্ষণের নামে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনা তদন্তে তার সত্যতাও মিলেছে। মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে বর্তমান ডিজি আফজাল হোসেনকে তাঁর পদ থেকে অপসারণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা চেয়ে জোড় লবিং চালাচ্ছে রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছোঁড়া হচ্ছে তারা হলেন,সাবেক রেক্টর পার্থ সরকার বর্তমানে তিনি রেলভবনে মার্কেটিং এন্ড কর্পোরেট প্লানিং বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক, ট্রেনিং একাডেমির প্রধান কর্মকর্তা এস এম সলিমুল্লাহ বাহার এবং সাবেক রেক্টর বর্তমানে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক(রোলিং স্টক) আহমেদ মাহবুব চৌধুরী।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন পদোন্নতির জন্য এই তিন কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাথে জোড় তদবির চালিয়ে যাচ্ছে গ্রেড-২পদায়নের জন্য। মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার দুই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেড-২ এবং সহকারী পরিচালকসহ ৬/৭ জন কর্মকর্তা পদোন্নতির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লবিং করে ব্যর্থ হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছে এখন কোন পদোন্নতি হবে না। পার্থ সরকার আগামী ডিসেম্বর অবসের যাওয়ার কথা রয়েছে। তবুও তিনি মহাপরিচালক (ডিজি) হওয়ার আশা ছাড়েনি।
কোন এক অভিযোগে অতিরিক্ত মহাপরিচালক(এডিজি আর এস) এর পদ থেকে পার্থকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমিতে গত বছরের ৫ নভেম্বর বদলি করে মন্ত্রণালয়। সেখানে যোগদান করেন ১৭ নভেম্বর। যোগদানের তিন মাস পর গত ১৬ মার্চ রেক্টরের পদ থেকে অদৃশ্য ক্ষমতায় বদলি অর্ডার নিয়ে রেলভবনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক মার্কেটিং এন্ড কর্পোরেট প্লানিং বিভাগের যোগদেন চলতি বছরের ২ মার্চ। কিন্তু ট্রেনিং একাডেমিতে দায়িত্ব পালন শেষ করেন ১৬ মার্চ। অতিরিক্ত মহাপরিচালক পদে যোগদান দেখানো হয়েছে ২ মার্চ। কর্মস্থলে যোগদানের তারিখ জালিয়াতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
একাডেমির উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান,পার্থ সরকার তিন মাস দায়িত্ব পালনে কাজের প্রতি অমনোযোগী ছিলেন। তিনি কোন কিছু মনে রাখতে পারে না। যে কোন বিষয় তাঁকে মনে করে দিতে হতো।
সম্প্রতি রেলভবনের তৃতীয় তলায় সিনিয়র প্লানিং অফিসার-৩ হুমায়ারা মহিউদ্দিনের দপ্তরে পার্থ সরকারের সাক্ষাৎ হলে তিনি ভুলে যাওয়ার কথা অপকটেই স্বীকার করে বলেন,বয়স হয়েছে অনেক কিছু মনে রাখতে পারি না। চট্টগ্রাম রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমিতে আহমেদ মাহবুব চৌধুরী রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি। ২০২৪ সালের ৯ নভেম্বর প্রায় দশ মাস প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এর পর তাকে রেলভবনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক রোলিং স্টক(এডিজি আরএস) হিসেবে বদলি করে মন্ত্রণালয়। সংস্থার উচ্চপদে থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রোকে শাস্তিমূলক বিবেচনা না করে যুগোপযোগী করে প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিদের টিএ-ডিএ এবং ভাতাদিসহ সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হলে ট্রেনিং শেষে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের প্রদান করা সনদ-বাণিজ্যের যে অভিযোগ ওঠে সেটি বিলুপ্ত হবে।
কথার এক পর্যায়ে প্রতিবেদককে বলেন,বর্তমান রেক্টর এস এম সলিমুল্লাহ বাহার তৃতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা। তবে তিনি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধি হয়েও অতিরিক্ত মহাপরিচালক হয়েছেন। এর চেয়ে বেশি আশা করা উনার পক্ষে ঠিক হবে না।
কারণ হিসেবে উল্লেখ করে জানান, মহাপরিচালকের (ডিজি) দায়িত্ব বিশাল। ডিজির উপর পুরো রেলওয়ের দায়ভার। এতো বড় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা এবং বিভিন্ন প্রোগ্রাম কাভার করার মতো ক্ষমতা তাঁর নেই। গত ১৬ মার্চ তিনি রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকালে ঘুষ ছাড়া প্রকল্পের ফাইল না ছাড়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ফাইলে ঘুষ না দেওয়ায় সেই নথি ৭ মাস সলিমুল্লাহ বাহারের টেবিলে পরেছিল।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায় রেলভবনে, ভারতীয়”র,এর এজেন্ট বাবুল পালসহ দুই সদস্য এস এম সলিমুল্লাহ বাহারের দপ্তরে লান্সের টেবিলে দুপুরের খাবার খেতে দেখা যায়। যা স্টিল ছবিতে দৃশ্যমান। রেলের গোপন তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
ট্রেনিং সনদ বাণিজ্যের হিসাব পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২৪ পদে ৬৮৪ জন এবং ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ১৫টি পদে প্রশিক্ষণ নিয়েছে ৩৮২ জন। প্রশিক্ষণ শেষে তারা সকলেই সনদ গ্রহন করেছে। ট্রেনিং একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে কেউ ফেল করেনি।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, গ্রেড-২ পদবি সনদে ১০ হাজার,এইএন পদের সনদ গ্রহনে সমপরিমাণ,সহকারী সার্জনসহ অন্যান্য পদে সনদপত্র নিতে সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা গুনতে হয় তাদের। সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিদের উৎকোচ না নিয়ে সনদ না দেওয়ার অভিযোগও রেক্টরদের বিরুদ্ধে কম নয়।
উল্লেখ্য: বাংলাদেশ রেলওয়ের অতি গোপনীয় স্পর্শকাতর তথ্য পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন রেলভবনের এক কর্মচারী ও তার সহযোগী। তথ্য পাচারের অভিযোগে দুজনের বিরুদ্ধে সরকারি গোপন আইন, ১৯২৩-এর ৩ ও ৯ ধারায় বাড্ডা থানায় চলতি বছরের ১১ ফ্রেরুয়ারী একটি মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নম্বর-১১।
এডিজি আর এস মাহবুব বলেন, বিগত সরকারের আমলে রেল মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সূজন এবং সাবেক ডিজি সরদার শাহাদতকে সুপারিশ করা হয়েছিল পার্থ সরকারকে সার্সপেন্ট করার জন্য। রেলকর্তৃপক্ষ সেটি না করে বিভিন্ন কৌশলে তাকে সেফ করেন। রেলকর্তৃপক্ষের করুনায় তিনি এখনো চাকরিতে বহাল রয়েছেন। তাঁর দপ্তরে একান্ত এক সাক্ষাকারে তিনি এসব কথা জানান।
কথার একপর্যায়ে মাহবুব বলেন,জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কারও সাথে তার সম্পর্ক নেই। তবে ডিজি অপসারণের ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন,উপদেষ্টা মহোদয় যাচাই-বাছাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ডিজি নিয়োগ দিয়েছেন।
ডিজি অপসারণের বিষয়ে রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান প্রতিবেদককে বলেন,ডিজি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের নেই।