গণপূর্তে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঠিকাদারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে বিল পরিশোধের অভিযোগ

- আপডেট সময় : ০৪:৪৫:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৮০ বার পড়া হয়েছে
গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই/এম বিভাগ-৬ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তরিকুল আলম ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মেরামতের জন্য ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে এই বরাদ্দের টাকা কাজ সম্পন্ন না করেই ঠিকাদারের সাথে আঁতাত করে সম্পূর্ন বিল পরিশোধ করেছেন মোহাম্মদ তরিকুল আলম। তিনি ঠিকাদারকে বিশেষ সুবিধা দিতেই এই কাজ করেছেন বলে জানা যায়।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অর্থ বছরের শেষ দিকে কোন প্রাক্কলন অনুমোদন হওয়ার পর দরপত্র আহবান করে সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। তার পরও অর্থ বছর শেষ হওয়ায় কাজ শেষ দেখাতে হয়েছে জুনের মধ্যে। তা না করলে বরাদ্দ অর্থ সরকারের কোষাগারে ফেরত যাবে। এ কারণে বেশির ভাগ নির্বাহী প্রকৌশলীই গোঁজামিল দিয়ে বা কাজ না করেই কাগজে কলমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল দিয়ে দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই অর্থ বছরের মার্চ মাসে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে প্রেরিত এক স্মারকে দেখা যায়, মোহাম্মদ তরিকুল আলম ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ পেয়ছেন ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
এই বরাদ্দে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫টি লিফটের অকেজো/নষ্ট মেইন কন্ট্রোলার পরিবর্তন করণসহ আনুষাঙ্গিক মেরামত করণের ৪০ লাখ টাকার কাজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নীচ তলার নষ্ট/অকেজো সুইচ, সকেট, ফ্যান, লাইট ফিটিংস পরিবর্তন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ১০ লাখ টাকার কাজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২য় তলার পূর্ব-পশ্চিম পাশের নষ্ট/অকেজো সুইচ, সকেট, ফ্যান, লাইট ফিটিংস পরিবর্তন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ১০ লাখ টাকার কাজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের নষ্ট/অকেজো সুইচ, সকেট, ফ্যান, লাইট ফিটিংস পরিবর্তন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ৮ লাখ টাকার কাজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ ওয়ার্ডের এসি পরিবর্তন, লাইট ফিটিংস পরিবর্তন ও করে নতুন সরবরাহ ও স্থাপন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ১৫ লাখ টাকার কাজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়ালাইসিস বিভাগের নতুন এসি সরবরাহ ও স্থাপন এবং লাইট ফিটিংস পরিবর্তন ও করে নতুন সরবরাহ ও স্থাপন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ১৩ লাখ টাকার কাজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনফারেন্স রুমের এসি পরিবর্তন, লাইট ফিটিংস পরিবর্তন করে নতুন সরবরাহ ও স্থাপন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ১০ লাখ টাকার কাজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মহোদয়ের কক্ষের ইন্টেরিয়র কাজের জন্য নতুনভাবে ওয়্যারিং সহ বৈদ্যুতিক ফিটিংস ফিকচার ও এসি মেশিন সরবরাহ ও স্থাপন করন ১৫ লাখ টাকার কাজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবষ্টেশন ভবনে একজাষ্ট ফ্যান সরবরাহ ও স্থাপন সহ নষ্ট/অকেজো সুইচ, সকেট, ফ্যান, লাইট ফিটিংস পরিবর্তন ও পাওয়ার পয়েন্ট স্থাপন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ১০ লাখ টাকার কাজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিচেনের নষ্ট/অকেজো সুইচ, সকেট, একজাষ্ট ফ্যান ও সিলিং ফ্যান, লাইট ফিটিংস পরিবর্তন ও পাওয়ার পয়েন্ট স্থাপন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ৮ লাখ টাকার কাজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অক্সিজেন সেন্টারের অকেজো/নষ্ট ওয়্যারিং, লাইট ফিটিংস, ফ্যান, সুইচ সকেট পরিবর্তন এবং এসি সরবরাহ ও স্থাপন করন ৮ লাখ টাকার কাজ, মুগদা হাসপাতালের সিসিইউ ওয়ার্ডের এসি মেশিন সার্ভিসিং সহ আরও নতুন ৫টনের ০৪টি এসি মেশিন স্থাপন সহ আনুষাংগিক বৈদ্যুতিক ১০ লাখ টাকার কাজ রয়েছে।
চিঠিতে দেখা যায়, এই বরাদ্দের কাজ শেষ করে বিল পরিশোধ করার জন্য গত ২৬ জুন পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া ছিল। এই সময়ের মধ্যে কাজ সম্পাদন করে বিল পরিশোধ না করলে বরাদ্দকৃত অর্থ সরকারের কোষাগারে ফেরত যাবে। এই বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে সরকারের কোষাগারে ফেরত না যায় সেইজন্যই কাজ সম্পাদন না করে ২৬ জুনের মধ্যে ঠিকাদারকে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করে দিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তরিকুল আলম। অসম্পন্ন কাজের বিল পরিশোধ করে পরে সেই কাজ সম্পূর্ন সম্পাদন করার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। এতে তিনি ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।
পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস) অনুযায়ী কাজ সম্পাদন না করে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করার ফলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও ঠিকাদার উভয়ের বিরুদ্ধেই বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে চাকরি থেকে বরখাস্ত বা সাময়িক বরখাস্ত, আর্থিক জরিমানা, এবং সরকারের রাজস্ব ক্ষতিপূরণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এবিষয়ে ঢাকা গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৬ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তরিকুল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।