০৪:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিসিবিতে ভোট ভোট খেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
  • আপডেট সময় : ০২:৫৬:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫ ২৮ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন সোমবার ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে অনেক গণমাধ্যমের খবর গেলো শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাতেই হয়ে গেছে ক্রিকেট বোর্ডের ভোট!

জি, শুক্রবার মধ্যরাতে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে দলবেঁধে ই ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। এবারের বিসিবি নির্বাচনে তারকা ক্রিকেটার তামিম ইকবালসহ আরো ১৫ প্রার্থী নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ায় এমনিতেই উত্তাপ হারিয়েছিল ভোট। ১২ পদের বিপরীতে শেষমেশ প্রার্থী ছিলেন ১৬জন।

এবার মধ্যরাতের ভোটে সেটাও নির্ধারণ হয়ে যাওয়ায় সরে গেছেন লুতফর রহমান বাদলের মতো পরীক্ষিত সংগঠনসহ চারজন। আর এই চরম অনিয়মের প্রত্যক্ষ কারিগর বর্তমান ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

তবে আগে বিসিবি নির্বাচন স্থগিত বা পিছিয়ে নেওয়া এবং তফসিল বাতিলসহ ৩টি প্রস্তাব নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বোর্ডের কয়েকজন কাউন্সিলর। তাদের চাওয়া, আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে বিসিবির কার্যক্রম আরও কিছু দিন চালানোর পর নির্বাচন আয়োজনের। বিসিবির নির্বাচন পেছানোসহ ৩ প্রস্তাব প্রতিবাদী কাউন্সিলরদের।

তাদের প্রথম প্রস্তাব, বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ বৃদ্ধি করে পরবর্তীতে অর্থাৎ অদূর ভবিষ্যতে সুন্দর নির্বাচন গ্রহণের ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন। এবং সবশেষ বর্তমান তফসিল বাতিল করে বর্তমান বা নতুন নির্বাচন কমিশন নতুন তফসিল ঘোষণা করা যে নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা থাকবে।

বিসিবি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র নেওয়া কাউন্সিলরদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৮ জন সরে দাঁড়িয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালও। তামিম এখন নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় না থাকলেও সরে দাঁড়ানো বাকি কাউন্সিলররা নির্বাচন পিছিয়ে সবাইকে নিয়ে আবারো আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

তাদের অভিযোগ, জেলা ও বিভাগীয় কাউন্সিলর তালিকায় সরকারি হস্তক্ষেপ, আবাহনী-মোহামেডানের মতো বড় ক্লাবের কাউন্সিলরদের নির্বাচন বর্জন, বিসিবি সভাপতির একক হস্তক্ষেপে কাউন্সিলরদের যোগ্যতার ক্যাটাগরি নির্ধারণ, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর সাবেক বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদের কাউন্সিলরশিপ গ্রহণ, ১৫ ক্লাবকে কাউন্সিলরশিপ না দেওয়া এবং জেলা-বিভাগীয় কাউন্সিলরদের আটকে রাখা।

গত ২৪ ঘণ্টায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাদল ও রাজশাহী বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর হাসিবুল আলম। এমন অবস্থায় বিসিবির নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রায়শই প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে নির্বাচন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাদের বেশিরভাগ কাউন্সিলরদের নিয়ে শনিবার (৪ অক্টোবর) মোহামেডান ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

‘বিসিবি নির্বাচনে নোংরামির বিরুদ্ধে ক্লাব, সংগঠক ও কাউন্সিলরদের প্রতিবাদ’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিল ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রথম সারির ক্লাবও। যেখানে ক্রীড়া উপদেষ্টা তিনটি প্রস্তাব মেনে নির্বাচন না পেছালে সবধরনের ক্রিকেট বর্জনের হুমকি দেন মাসুদউজ্জামান।

শুধু তাই নয়, ৫ অক্টোবরের মধ্যে বিসিবি এটা সুরাহা না করলে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়ার হুমকিও দিয়েছে ঢাকার শীর্ষ স্থানীয় ক্লাবগুলো। জানা গেছে, ঢাকার ৪৮টি ক্লাবের সায় আছে এমন আন্দোলনে। উপদেষ্টাকে প্রস্তাব দেয়ার পরও সাড়া না পাওয়ায় সংবাদ সম্মেলনে ডেকেছেন বলে জানান মাসুদউজ্জামান। তিনি বলেন, ‘পথটা খোলা। ওই দিনই (গত পরশু) খুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো সাড়া না পাওয়াতেই আজকে এই জায়গায় বসা।’

এদিকে বিসিবি নির্বাচন পেছাতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংগঠকদের স্মারকলিপি দিয়েছেন ক্লাব ক্রিকেটের সংগঠকরা।

ঢাকা ক্রিকেট ক্লাব অর্গানাইজারসের পক্ষে ড. ইউনূসের কাছে পাঠানো স্মারক লিপিটি বিসিবি কাউন্সিলর মো. রফিকুল ইসলাম বাবু স্বাক্ষরিত। তাদের দাবি, নির্বাচনে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কেউ কেউ হস্তক্ষেপ করছে। দাবিকৃত সেই কেউটা যে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, তা কারো অজানা নয়। এই প্রসঙ্গটা ভিন্নভাবে আজ উঠেছিল বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সামনে।

মিরপুরে আজ বিসিবি নির্বাচন ইস্যুতে কথা বলার সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ক্রীড়া উপদেষ্টার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে বুলবুল বলেন, ‘ক্রীড়া উপদেষ্টা আমাকে সব সময় সহযোগিতা করেছেন। আমি তাকে কয়েকটা ব্যাপারে ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি মন্ত্রী পদমর্যাদার মানুষ। রাত-বিরাতে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন, যাতে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। আর আমার কাছে ইনফ্লুয়েন্স কিছুই মনে হয়নি।’

তবে বুলবুল যাই বলুন না কেন ঢাকার‌ ক্রিকেট পাড়ায় কান পাতলে এখন একটা কথাই শোনা যায় – এই কি তবে বর্তমান সরকারের নয়া বন্দোবস্ত?

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বিসিবিতে ভোট ভোট খেলা

আপডেট সময় : ০২:৫৬:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন সোমবার ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে অনেক গণমাধ্যমের খবর গেলো শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাতেই হয়ে গেছে ক্রিকেট বোর্ডের ভোট!

জি, শুক্রবার মধ্যরাতে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে দলবেঁধে ই ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। এবারের বিসিবি নির্বাচনে তারকা ক্রিকেটার তামিম ইকবালসহ আরো ১৫ প্রার্থী নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ায় এমনিতেই উত্তাপ হারিয়েছিল ভোট। ১২ পদের বিপরীতে শেষমেশ প্রার্থী ছিলেন ১৬জন।

এবার মধ্যরাতের ভোটে সেটাও নির্ধারণ হয়ে যাওয়ায় সরে গেছেন লুতফর রহমান বাদলের মতো পরীক্ষিত সংগঠনসহ চারজন। আর এই চরম অনিয়মের প্রত্যক্ষ কারিগর বর্তমান ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

তবে আগে বিসিবি নির্বাচন স্থগিত বা পিছিয়ে নেওয়া এবং তফসিল বাতিলসহ ৩টি প্রস্তাব নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বোর্ডের কয়েকজন কাউন্সিলর। তাদের চাওয়া, আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে বিসিবির কার্যক্রম আরও কিছু দিন চালানোর পর নির্বাচন আয়োজনের। বিসিবির নির্বাচন পেছানোসহ ৩ প্রস্তাব প্রতিবাদী কাউন্সিলরদের।

তাদের প্রথম প্রস্তাব, বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ বৃদ্ধি করে পরবর্তীতে অর্থাৎ অদূর ভবিষ্যতে সুন্দর নির্বাচন গ্রহণের ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন। এবং সবশেষ বর্তমান তফসিল বাতিল করে বর্তমান বা নতুন নির্বাচন কমিশন নতুন তফসিল ঘোষণা করা যে নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা থাকবে।

বিসিবি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র নেওয়া কাউন্সিলরদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৮ জন সরে দাঁড়িয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালও। তামিম এখন নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় না থাকলেও সরে দাঁড়ানো বাকি কাউন্সিলররা নির্বাচন পিছিয়ে সবাইকে নিয়ে আবারো আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

তাদের অভিযোগ, জেলা ও বিভাগীয় কাউন্সিলর তালিকায় সরকারি হস্তক্ষেপ, আবাহনী-মোহামেডানের মতো বড় ক্লাবের কাউন্সিলরদের নির্বাচন বর্জন, বিসিবি সভাপতির একক হস্তক্ষেপে কাউন্সিলরদের যোগ্যতার ক্যাটাগরি নির্ধারণ, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর সাবেক বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদের কাউন্সিলরশিপ গ্রহণ, ১৫ ক্লাবকে কাউন্সিলরশিপ না দেওয়া এবং জেলা-বিভাগীয় কাউন্সিলরদের আটকে রাখা।

গত ২৪ ঘণ্টায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাদল ও রাজশাহী বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর হাসিবুল আলম। এমন অবস্থায় বিসিবির নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রায়শই প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে নির্বাচন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাদের বেশিরভাগ কাউন্সিলরদের নিয়ে শনিবার (৪ অক্টোবর) মোহামেডান ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

‘বিসিবি নির্বাচনে নোংরামির বিরুদ্ধে ক্লাব, সংগঠক ও কাউন্সিলরদের প্রতিবাদ’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিল ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রথম সারির ক্লাবও। যেখানে ক্রীড়া উপদেষ্টা তিনটি প্রস্তাব মেনে নির্বাচন না পেছালে সবধরনের ক্রিকেট বর্জনের হুমকি দেন মাসুদউজ্জামান।

শুধু তাই নয়, ৫ অক্টোবরের মধ্যে বিসিবি এটা সুরাহা না করলে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়ার হুমকিও দিয়েছে ঢাকার শীর্ষ স্থানীয় ক্লাবগুলো। জানা গেছে, ঢাকার ৪৮টি ক্লাবের সায় আছে এমন আন্দোলনে। উপদেষ্টাকে প্রস্তাব দেয়ার পরও সাড়া না পাওয়ায় সংবাদ সম্মেলনে ডেকেছেন বলে জানান মাসুদউজ্জামান। তিনি বলেন, ‘পথটা খোলা। ওই দিনই (গত পরশু) খুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো সাড়া না পাওয়াতেই আজকে এই জায়গায় বসা।’

এদিকে বিসিবি নির্বাচন পেছাতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংগঠকদের স্মারকলিপি দিয়েছেন ক্লাব ক্রিকেটের সংগঠকরা।

ঢাকা ক্রিকেট ক্লাব অর্গানাইজারসের পক্ষে ড. ইউনূসের কাছে পাঠানো স্মারক লিপিটি বিসিবি কাউন্সিলর মো. রফিকুল ইসলাম বাবু স্বাক্ষরিত। তাদের দাবি, নির্বাচনে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কেউ কেউ হস্তক্ষেপ করছে। দাবিকৃত সেই কেউটা যে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, তা কারো অজানা নয়। এই প্রসঙ্গটা ভিন্নভাবে আজ উঠেছিল বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সামনে।

মিরপুরে আজ বিসিবি নির্বাচন ইস্যুতে কথা বলার সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ক্রীড়া উপদেষ্টার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে বুলবুল বলেন, ‘ক্রীড়া উপদেষ্টা আমাকে সব সময় সহযোগিতা করেছেন। আমি তাকে কয়েকটা ব্যাপারে ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি মন্ত্রী পদমর্যাদার মানুষ। রাত-বিরাতে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন, যাতে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। আর আমার কাছে ইনফ্লুয়েন্স কিছুই মনে হয়নি।’

তবে বুলবুল যাই বলুন না কেন ঢাকার‌ ক্রিকেট পাড়ায় কান পাতলে এখন একটা কথাই শোনা যায় – এই কি তবে বর্তমান সরকারের নয়া বন্দোবস্ত?